জীবনের শেষ কথা রিকশাওয়ালাকে বলে গিয়েছিলেন রিফাত Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




জীবনের শেষ কথা রিকশাওয়ালাকে বলে গিয়েছিলেন রিফাত

জীবনের শেষ কথা রিকশাওয়ালাকে বলে গিয়েছিলেন রিফাত

জীবনের শেষ কথা রিকশাওয়ালাকে বলে গিয়েছিলেন রিফাত




বরগুনা প্রতিনিধি॥ মিন্নিকে নয়, জীবনের শেষ কথাটি রিকশাচালক দুলালকে বলেছিলেন বরগুনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার রিফাত শরীফ। গত ২৬ জুন বরগুনায় দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন তিনি।

 

 

সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া রিকশাচালক দুলাল। দুলালের বাড়ি সদর ইউপির ফরাজীপুরে।

 

 

ভয়াবহ সেই স্মৃতি হাতড়ে তিনি সেদিনের কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন। ঘটনার বিবরণে দুলাল বলেন, ওইদিন কলেজ রোডে ক্ষ্যাপ নিয়ে গেছিলাম। মানুষের ভিড়ের কারণে আর সামনের দিকে যাইতে পারি না। শুনলাম সামনে কারা যেন কারে মারতেসে। প্যাসেঞ্জারকে নামায়ে আমি রিকশা ঘুরায়ে কেবল দাঁড়াইসি সেই সময় একটা ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাঁইটা আইসা আমার রিকশায় উইঠাই কয়, চাচা আমারে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া যান। সেটাই ছিল ছেলেটির শেষ কথা।

 

 

তিনি বলেন, আমি দেখলাম ছেলেটার গলা ও বুকের বাম পাশ কাইটা রক্ত বাইর হইতাসে। হের জামাটা টাইনা আমি গলা ও বুকে চাইপা ধইরা হেরে কইলাম আপনি চাইপা ধরেন, আমি চালাই। আমি হাসপাতালে যাওনের জন্য কেবল সিটে বসছি, চালামু, সেসময় একটা মেয়ে দৌড়ে রিকশায় উইঠা ওই পোলাডারে ধইরা বসে। আমি তাড়াতাড়ি রিকশা চালাইয়া হাসপাতালের দিকে যাই।

 

 

দুলাল আরো বলেন, এক মিনিটের মতো রিফাত ঘাড় সোজা করে বসে ছিল। এরপর সে মেয়েটির কাঁধে ঢলে পড়ে যায়। আর কাঁধ সোজা করতে পারেনি। আমাদের রিকশার পাশাপাশি একটা লাল পালসার মোটরসাইকেলে দুইটা ছেলে যাচ্ছিল। মেয়েটি চিৎকার করে রিফাতের জখম চেপে ধরে রক্ত থামানোর জন্য তাদের কাছে কাপড় চাইছিলো, ওরা সাড়া দেয়নি। আমার কাছে মেয়েটি ফোন চায় বাড়িতে জানানোর জন্য, কিন্তু আমার ফোন নাই। পরে ওই মোটরসাইকেলের ছেলেদের কাছেও সে ফোন চায়। মেয়েটি বলে, ভাই আপনাদের একটা ফোন দেন, আমি একটু বাবার কাছে ফোন করব। কিন্তু তারা বলে, আমাদের কাছে ফোন নাই, তুমি হাসপাতালে যাইতেছো যাও।

 

 

তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢোকার সময় মেয়েটি একজন লোককে ডাক দেয়। রিকশা থামানোর সাথে সাথেই ওই লোক দৌড়ে আসে। রিফাতের অবস্থা দেখে সেই লোক স্ট্রেচার নিয়ে আসে। রিফাতকে রিকশা থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে করে অপারেশন থিয়েটারে দিয়ে আসি। রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমার রিকশার ছবি তুলে নেয় আর কাগজপত্র নিয়ে যায়। আমার রিকশার কাগজপত্র এখনো পুলিশের কাছে।

 

 

মিন্নির ডাকে ছুটে এসেছিলেন যিনি

 

 

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ও রিকশাওয়ালার বর্ণনামতে, সাদা গেঞ্জি পরা এক লোক দৌড়ে আসেন। রিকশাচালক দুলালকে সঙ্গে নিয়ে স্ট্রেচার নিয়ে আসেন তিনি। স্ট্রেচারে তুলে রিফাতকে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারেও নিয়ে যান। ওই ব্যক্তির নাম আমিনুল ইসলাম মামুন। তিনি একজন অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী।

 

 

মামুন বলেন, মিন্নির ডাক শুনেই আমি দ্রুত ছুটে যাই। রিফাতের অবস্থা দেখে দ্রুত রিকশাচালক ভাইকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে স্ট্রেচার নিয়ে আসি। সে সময় রিফাত রিকশায় মিন্নির কাঁধে ভর করে বসে ছিল। আমি, রিকশাচালক ও মিন্নি তিনজন মিলে রিফাতকে ধরে স্ট্রেচারে তুলি। দ্রুত তাকে ওটিতে নিয়ে যাই।

 

 

তিনি বলেন, ডাক্তারের লিখে দেয়া স্লিপ নিয়ে ফার্মেসিতে তিনবার ছুটে যাই। তিনবারে এক হাজার ৪০০ টাকার ওষুধ কিনে আনি। রিফাতের শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। কিছুতেই রক্ত বন্ধ করা যাচ্ছিলো না। চিকিৎসক রিফাতের ক্ষত গজ ও তুলা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেন। পরে দ্রুত বরিশাল নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে নিয়ে আসি। এর মধ্যে রিফাতের বন্ধুরা সেখানে আসে। মিন্নির চাচা ও বাবা আসেন। পুরে রিফাতকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়। মিন্নিও যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলো কিন্তু তার বাবা ও চাচা তাকে যেতে দেননি।

 

 

মামুন বলেন, একজন মানুষের বিপদে সহায়তা করা মানবিক দায়িত্ব, সে যেকোনো মানুষই হোক না কেন। আমিও সেই চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আফসোস রিফাতকে বাঁচানো যায়নি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD